Wednesday, December 11, 2024

বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি

ভূপ্রকৃতি সমগ্র পৃথিবী বা তার কোন অংশের প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের বর্ণনা; বিশেষ করে তাদের প্রকৃতি, গাঠনিক উপাদান, সঙ্গা, বিন্যাস, পরিবর্তন, প্রকৃতির বিস্তারিত বিবরণ। হাক্সেলে ১৮৬৯ সালে ভূগোল শাস্ত্রে ‘প্রাকৃতিক প্রপঞ্চসমূহের সাধারণ বর্ণনা’ অধ্যয়নের জন্য ফিজিওগ্রাফি শব্দটির প্রচলন করেন। পরবর্তীতে শব্দটি পৃথিবীর উপরিভাগের চিত্র তথা বায়ুমন্ডল, জলমন্ডল এবং ভূ-মন্ডল অঙ্গ সমূহের উৎপত্তি প্রক্রিয়ার বর্ণনা বোঝাতে ব্যবহৃত হতে থাকে। অর্থাৎ ভূ-প্রকৃতি শব্দটি পরবর্তীতে প্রাকৃতিক ভূগোল শাস্ত্রের সমার্থক হয়ে দাড়ায় । আধুনিককালে ভূপ্রকৃতি শুধু প্রাকৃতিক ভূগোল শাস্ত্রের একটি অংশ তথা ভূমিরুপের উৎপত্তি ও বর্ণনাতেই সীমিত থাকে। 

একই ভূতাত্ত্বিক গঠন ও জলবায়ুগত ইতিহাস রয়েছে এবং ফলসরুপ একই সমরুপ ভূরুপতাত্ত্বিক ইতিহাস ধারণ করে এমন একটি সমসত্ব অঞ্চলকে ভূপ্রাকুতিক অঞ্চল বা একক বলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই একটি ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চল তার সংলগ্ন অন্য অঞ্চলগুলো থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়।

বাংলাদেশের  ভূপ্রকৃতি:
বাংলাদেশের ভূপৃষ্টের প্রায় অর্ধেক অংশ গঙ্গা, ব্রক্ষ্মপুত্র ও মেঘনা এই তিনটি বৃহৎ নদীপ্রণালীর সর্বনিম্ন ভাটিতে অবস্থিত এবং গড় উচ্চতা ১০ মিটার সমোন্নতি রেখার নিচে।

উচ্চতা ও ভূমিরুপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভূপ্রকৃতিকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা:
1.    টারশিয়ারী যুগের পাহাড়
2.    প্লাসটোসিন কালের সোপান
3.    নবীন যুগের প্লাবনভূমি এলাকা

সমুদ্র সমতল থেকে খুব বেশি উচু না হওয়ায় প্রতি বছর প্রবল মৌসুমি বর্ষনের ফলে দেশের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।

পদ্মা, ব্রক্ষ্মপুত্র ও মেঘনা নদী এবং তাদের অসংখ্য উপনদী ও শাখানদী বাহিত কোয়াটারনারী যুগের পলল বাংলাদেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকার সঞ্চিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়কালে পলিজ সমভূমির মধ্য, উত্তর এবং পশ্চিম অঞ্চলের । ভূপ্রকৃতি এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।

বিগত দশ বছরের সময়ে গঙ্গা এবং তিস্তা নদীর পূর্বমুখী স্থানান্তর এবং সেই সঙ্গে ব্রক্ষ্মপুত্রের উল্লেখযোগ্যভাবে পশ্চিমমুখি স্থানান্তর সাম্প্রতিক সময়কালেও মহীগাঠনিক ভূ-আলোড়নের সাক্ষ্য বহন করে ।

টারশিয়ারী যুগের টিলা এবং পাহাড়সমূহ ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম ঘেঁষে এবং মায়ানমার সীমানা ঘেঁষে সিলেট জেলার পূর্ব ও দক্ষিণ ভাগে এবং দেশের দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত পার্বত্য চট্রগ্রাম জুড়ে বিস্তৃত।

আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিকে সুস্পষ্ট তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
1.    প্লাবন সমভূমি
2.    সোপান অঞ্চল
3.    পার্বত্য অঞ্চল

এদের প্রত্যেকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।


বিস্তৃতভাবে দেশের ভূপ্রকৃতিকে ২৪ টি উপঅঞ্চলে এবং ৫৪ টি এককে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রধান প্রধান ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ এবং উপবিভাগসমূহ নিম্নরুপ:
1.    পুরাতন হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি
2.    তিস্তা প্লাবনভূমি
3.    পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র প্লাবনভূমি
4.    মেঘনা প্লাবনভূমি – মধ্য মেঘনা প্লাবনভুমি, লোয়ার মেঘনা প্লাবনভূমি, পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি, নবীন মেঘনা মোহনাজ প্লাবনভূমি
5.    যমুনা প্লাবনভূমি
6.    হাওর অববাহিকা
7.    সুরমা-কুশিয়ারা প্লাবনভূমি
8.    গাঙ্গেয় প্লাবন সমভূমি
9.    আড়িয়াল বিল
10.    চট্রগ্রাম উপকূলীয় সমভূমি
11.    প্লাস্টোসিনকালের উচ্চভূমি ইত্যাদি

No comments:

Post a Comment