Thursday, December 26, 2024

বাংলাদেশের বৃহত্তম বদ্বীপ

বাংলাদেশের বৃহত্তম বদ্বীপ হচ্ছে সুন্দরবন। এটি দেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত । এ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের সমভূমিকে সাধারণত বদ্বীপ বলে । এ বদ্বীপ অঞ্চলটি বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালি অঞ্চলের সমুদয় অংশ জুড়ে বিস্তৃত । এ বদ্বীপ অঞ্চলের দক্ষিণ ভাগের যে অংশে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় সে অংশকে স্রোতজ সমভূমি বলে। এ অঞ্চলে ছোট ছোট বহু নদী-নালা রয়েছে যা অসংখ্য শাখা-প্রশাখা ও সারিতে বিভক্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এ স্রোতজ সমভূমি অঞ্চলের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে ম্যানগ্রোভ বা গরান বৃক্ষের বনভূমি রয়েছে । এ বনভূমি সুন্দরবন নামে প্রসিদ্ধ । এ অঞ্চলের নদীতে প্লাবন খুব কম কিন্তু নিয়মিত জোয়ার-ভাটা হয়।


অবস্থান: খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালি
স্থানাঙ্ক: ২১°৫৬´ উত্তর, ৮৯°১০´ পূর্ব
আয়তন: ১০০০০ বর্গ কিমি যার মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬৯১৭ বর্গ কিমি
স্বীকৃতি: ১৯৯২ সালের ২১ মে ‘রামাসার স্থান’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

উদ্ভিদবৈচিত্র: সুন্দরবনের প্রধান বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে সুন্দরী, গরান ও কেওড়া গাছ । ১৯০৩ সালে প্রকাশিত গ্রেইন এর হিসাব মতে ২৪৫ টি শ্রেনী এবং ৩৩৪ টি প্রজাতি রয়েছে এখানে। সুন্দরবসকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্রগ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি হিসেবে।

প্রাণিবৈচিত্র: সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ীম ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রজাতির আবাসস্থল। বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ১১৪ টি।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান রয়েছে । এটি দেশের বনজ সম্পদের একটি উৎস। এই বন কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামাল যোগান দেয় । এছাড়াও কাঠ-জ্বালানী, মন্ডের মত প্রথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে আহরণ করা হচ্ছে ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ,  কাঁকড়া এবং শামুক ও ঝিনুক । বৃক্ষপূর্ণ সুন্দরবনের এই ভূমি একইসাথে আবাসস্থল, পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সমন্বয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারক, শক্তি সম্পদের আধার ও পর্যটনকেন্দ্র। সুন্দরবন থেকে আসা মোট আয়ে অবদান প্রায় ৪৫ শতাংশ । বিভিন্ন শিল্প যেমন: দেয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, নিউজপ্রিন্ট, আসবাবপত্র এর কাঁচামালের জন্য সুন্দরবন অন্যতম উৎস। এই বনে ১৩ পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়। এক সময় প্রাণিজ আমিষের ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে সক্ষম ছিল সুন্দরবন।


No comments:

Post a Comment